সূর্যগ্রহণের সময় রাসূল (সা.) যা করতে বলেছেন

সূর্যগ্রহনের সময় রাসুল (সাঃ) যে কাজ করতে বলেছেন-



ইসলাম ডেস্ক- মানুষেরা অত্যন্ত আনন্দ আর কৌতূহল নিয়ে সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করে থাকে। সূর্য ও চন্দ্র যখন গ্রহণের সময় হয় তখন আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এর চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেত। তখন তিনি সাহাবীদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তেন। কান্নাকাটি করতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
আরবিতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘নামাজে কুসূফ’ বলা হয়। দশম হিজরিতে যখন পবিত্র মদিনায় সূর্যগ্রহণ হয়, ঘোষণা দিয়ে লোকদের নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। তারপর সম্ভবত তার জীবনের সর্বাধিক দীর্ঘ নামাজের জামাতের ইমামতি করেছিলেন।
সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদাহ মোটকথা, প্রত্যেকটি রুকু সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিল। অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা প্রথমে যখন মহানবীর (সা.) আমল সম্পর্কে জানতে পারল, তখন তারা এটা নিয়ে ব্যঙ্গ করল। তারা বলল, এ সময় এটা করার কী যৌক্তিকতা আছে? সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্রটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে বলে সূর্যগ্রহণ হয়। ব্যাস এতটুকুই! এখানে কান্না কাটি করার কী আছে?
এখনও কিছু বাস্তব ধারণাহীন মানুষ অজ্ঞতাবশত রাসুলের (সা.) এ আমল নিয়ে উপহাস করে! মজার বিষয় হলো বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় যখন এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করল, তখন মহানবী (সা.) এ আমলের তাৎপর্য বেরিয়ে আসল।
সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ কী
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত একটি প্রক্রিয়া। চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোনো দর্শকের কাছে কিছু সময়ের জন্য সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই সূর্যগ্রহণ (ঝড়ষধৎ বপষরঢ়ংব) বা কুসুফ। আর পৃথিবী যখন তার পরিভ্রমণরত অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখনই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে চাঁদ কিছুক্ষণের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই চন্দ্রগ্রহণ (খঁহধৎ বপষরঢ়ংব) বা খুসুফ।
পবিত্র কোরআনে সূর্য ও চন্দ্র প্রসঙ্গ
আমরা বাংলায় সূর্যালোক অথবা চন্দ্রালোক বলি। ইংরেজিতে বলি ঝঁহষরমযঃ এবং গড়ড়হষরমযঃ। কিন্তু পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই সত্তা, যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জ্বল ও চঁঁদকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫) সূর্য সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আর আমি সৃষ্টি করেছি একটি প্রজ্বলিত বাতি।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ১৩)
চাঁদের ব্যাপারে বিজ্ঞান বলে চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। সূর্যের প্রতিফলিত আলোই চাঁদের সম্বল। পবিত্র কোরআন আরও স্পষ্ট করে বলছে, ‘আল্লাহ চাঁদকে স্থাপন করেছেন আলোরূপে, আর সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপরূপে।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১৬)
ইসলামের দৃষ্টিতে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে এতদুয়ের ওপর একটি ক্রান্তিকাল হিসেবে গণ্য করা হয়। সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর সৃষ্টি। এর প্রমাণস্বরূপই আল্লাহ এ দুটোর ওপর ‘গ্রহণ’ দান করেন। আর এই দুটি আল্লাহর অপার কুদরতের নিদর্শন বৈ অন্য কিছুই নয়।

হাদিস বিশারদ ও ইসলামের গবেষকরা বলেছেন, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর পক্ষ থেকে এ সতর্কবাণী পৌঁছে দেয় যে, অন্যান্য সৃষ্টির মতো চন্দ্র-সূর্যও আল্লাহর মাখলুক; এরা উপাসনার যোগ্য নয়। এ দুটি যেহেতু নিজেরাই বিপদাক্রান্ত হয়, তাই এগুলো উপাসনার যোগ্য হতে পারে না। বরং এ দুটিকে মহান আল্লাহকে চেনার মাধ্যম গ্রহণ করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
আল্লাহ বলেছেন, ‘তার নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা কোরো না, আর চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সঙ্গে শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা হা-মিম সিজদা, আয়াত : ৩৭)
জাহিলি যুগে মানুষের ধারণা ছিল, কোনো মহাপুরুষের জন্ম-মৃত্যু বা দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ প্রভৃতির বার্তা দিতে সূর্য বা চন্দ্রগহণ হয়। ইসলাম এটাকে একটি ভ্রান্ত ধারণা আখ্যায়িত করেছে। ‘গ্রহণ’-কে সূর্য ও চন্দ্রের ওপর একটি বিশেষ ক্রান্তিকাল বা বিপদের সময় গণ্য করেছে।
এ কারণে সূর্য বা গ্রহণের সময় মুমিনদের অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা যেন এ সময়ে আল্লাহর তাসবিহ ও পবিত্রতা বর্ণনা করে। দোয়া, নামাজ ও আমল ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকে।
হাদিসের আলোকে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ
মুগিরা ইবনু শুবা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতেই সূর্যগ্রহণ হয়। তখন আমরা সবাই বলাবলি করছিলাম যে, নবিপুত্রের মৃত্যুর কারণেই এমনটা ঘটেছে। আমাদের কথাবার্তা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর অগণিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে দুটি নিদর্শন, কারোর মৃত্যু বা জন্মের ফলে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৪৩; মুসলিম, হাদিস : ৯১৫)
আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর কাছে ছিলাম। এমন সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হয়। রাসুল (সা.) তখন উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের চ

No comments

Powered by Blogger.